বাংলাদেশে পাবলিক রিলেশনস্ বা পিআর এখনো পুরোপুরি একটি পেশাদার শিল্পে পরিণত হয়নি। আর এই উঠতি খাতে নারী নেতৃত্ব এখনো বিরল একটি ঘটনা। যে কয়জন নারী এই পেশায় জায়গা করে নিতে পেরেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ইমপ্যাক্ট পিআর-এর প্রধান নির্বাহী সাবরিনা জামান।
তবে মিস জামান মনে করেন না যে, গণসংযোগ বা পাবলিক রিলেশনস্ খাতকে ‘পুরুষ-শাসিত’ বলা ঠিক হবে। ‘পিআর খাত এখনো খুব ছোট, এটা যে খুব স্থিতিশীল অবস্থায় আছে, তাও আমি বলবো না। এই শিল্প ‘পুরুষ-শাসিত’, সেটা বলা ঠিক হবে না,” মিস জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন।
সাবরিনা জামানের সাথে কথা হচ্ছিল লন্ডনে বিবিসি স্টুডিওতে। সাক্ষাৎকারের বড় একটি অংশ জুরে ছিল তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে পেশাগত জীবনে নারীদের অবস্থান।
শুরুতেই কথা হয় নারী হিসেবে পাবলিক রিলেশনস্-এর মত জায়গায় কাজ করা কতটা কঠিন বা সহজ, সে বিষয়ে। প্রচলিত ধারণার সাথে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে সাবরিনা জামান বলেন, একজন মহিলা হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করার অনেক এডভান্টেজ আছে।
”আমাদের দেশে মানুষ নারীকে অনেক সম্মান দেয়। আমি কর্পোরেট দুনিয়াতে সেই সম্মানটা পাই। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মিডিয়ায় নারী-পুরুষ ভেদাভেদটা খুব কম,” তিনি বলেন।
তিনি আগেই বলেছেন, পিআর খাতকে পুরুষ শাসিত বলা ঠিক হবে না। তাহলে এই পেশায় নারীরা কি আসছে? এই প্রশ্নের সরাসরি কোন উত্তর ছিল না।
”আশা করি আরো অনেক বেশি হবে। এই পেশা কাজ করার একটা সুন্দর জায়গা, তাই আমি চাই আরো বেশি নারী আসুক,” তিনি বলেন।
মিস জামানের কোম্পানি ইমপ্যাক্ট পি পিআর-এ ২৫ জন কর্মীর মধ্যে পাঁচজন নারী। তিনি এই সংখ্যাকে ‘অনেক আশাব্যঞ্জক’ হিসেবেই দেখছেন, কারণ বাংলাদেশে মেয়েদের চাকরীর বাইরে আরো অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়।
”আমার এক কলিগ বলছিলো, আমরা আমাদের সংসার, বাচ্চা, বাবা-মা সবাইকে সাথে নিয়েও যে এত পারফর্ম করতে পারি, সেগুলো না থাকলে আরো কত পারফর্ম করতে পারতাম, সে প্রশ্ন থেকেই যায়,” তিনি বলেন।
”আমরা যারাই প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে এসেছি নারী হিসেবে, আমাদের কিন্তু ঐ জায়গাগুলোতে কিছু আপোষ থাকলেও, কিছু দেখা-শোনা করতে হচ্ছে। আপনার ছেলে-মেয়ে খাচ্ছে কি না বা স্কুলে যাচ্ছে কি না, সেগুলো আমরা ইগনোর করতে পারি না,” তিনি বলেন।
সাবরিনা জামান ইমপ্যাক্ট পিআর-এর সাথে আছেন প্রায় দশ বছর হয়ে গেল। তার মধ্যে আট বছরেরও বেশি সময় তিনি প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন। পুরুষ কর্মীরা কি একজন নারীকে তাদের বস হিসেবে সহজে মেনে নিয়েছিল?
তিনি বলেন প্রথম দিকে বয়স একটা ফ্যাক্টর ছিল এবং কিছুটা ধাক্কা খেতে হয়েছিল। তবে ধাক্কাটা সামলে উঠতে বেশি দেরী হয়নি।
”চ্যালেঞ্জটা ছিল মূলত মানুষকে বোঝা এবং মানুষের মানসিকতাটা বোঝা। একেকজন কলিগের সাথে যোগাযোগ ছিল একেক রকম,” তিনি বলেন।
মিস জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তখন তিনি ভাবেননি যে পাবলিক রিলেশনস্ হবে তার পেশা।/বিবিসি