ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার তালিকায় থাকা শীর্ষ ২৫ ঋণখেলাপির পকেটে রয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এ তালিকায় অবশ্য অনেক রাঘব বোয়াল ঋণগ্রহীতার নাম নেই।সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে তথ্য উঠে এসেছে।
মূলত কিছু ব্যবসায়ীর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তা পরিশোধ না করায় এ ঋণ এখন আদায় অযোগ্য বা কুঋণে পরিণত হয়েছে। এদের কেউ কেউ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ঋণ নবায়ন করেছিলেন। কিন্তু পরে কিস্তি পরিশোধ না করায় আবার ওই ঋণ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানা যায়, ৫০০ ও এক হাজার কোটি টাকার ও পরের ঋণখেলাপিদের মাত্র ১ ও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়নের বিশেষ সুবিধা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুবিধায় ১৪টি প্রতিষ্ঠান এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ দীর্ঘ মেয়াদে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করেছে। পুনর্গঠন করা না হলে খেলাপিদের তালিকায় এসব প্রতিষ্ঠান শীর্ষে থাকত। ঋণখেলাপি নিয়ে সেপ্টেম্বরে করা সর্বশেষ তালিকায় ৫০০ কোটি টাকার ওপরে ঋণখেলাপির সংখ্যা এখন ৫। এ পাঁচটিসহ শীর্ষ ২৫টি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল ১০ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় করেছে মাত্র ৯৩৫ কোটি টাকা।
বাকি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকাই দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকের কুঋণ হিসেবে আটকে রয়েছে। এ ঋণ এখন ব্যাংকের খাতায় গলার কাটা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ এসব খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের আয় থেকে প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। ফলে মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় মামলা করেও দীর্ঘদিন ধরে তা ঝুলে রয়েছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরের তথ্য নিয়ে তৈরি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শীর্ষ ২৫ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের দাদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্সের কাছে ঋণ রয়েছে ৮৮৯ কোটি টাকা। পুরো ঋণই এখন খেলাপি। প্রতিষ্ঠানটি ১৫টি ব্যাংক থেকে এ ঋণ নিয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে এবি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।
দ্বিতীয় শীর্ষ ঋণখেলাপি হলো কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ৭৪৪ কোটি টাকার মধ্যে ৫৫৮ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে পড়েছে।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জাসমির ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেড। তাদের ৫৪৭ কোটি টাকার বকেয়া ঋণের পুরোটাই খেলাপি হয়ে পড়েছে।