তৌহিদুর রহমান চৌধুরী: ২৫ মার্চ ১৯৭১। ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে বাঙালি জাতির রক্তে যখন আগুন, স্ব-অধিকার পেতে পুরো জাতি যখন মুখিয়ে, ঠিক তখনই দিনকে আলোকিত করা সূর্য অস্তমিত হতেই নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নরপিচাশ পাক হানাদার বাহিনী।
সত্তরের প্রাদেশিক নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে জয়লাভের পরও আওয়ামীলীগকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা থেকে বিরত থাকেন তৎকালীন পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খাঁন। যার প্রতিবাদে বাংলার জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন। ১-২৫মার্চ টানা অসহযোগ আন্দোলনে ভীত হয়ে পাকিস্তান সরকার বাংলার নিরীহ মানুষের উপর ২৫ মার্চ রাতে তাদের সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেয়।

২৫ মার্চের গণহত্যার খন্ডচিত্র
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৫শে মার্চ রাট সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম হামলা করে ফার্মগেট এলাকায় মিছিলরত মুক্তিকামী জনতার উপর। এরপর আক্রমণ চালায় পিলখানায় তৎকালীন ইপিআর সদর দপ্তর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। রাতভর তাদের এই গণহত্যা চলতে থাকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়।
২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে রাত ১.৩০ টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী।
‘অপারেশন সার্চলাইট’ এর নামে পাক সেনারা গণহত্যা শুরু করলে সাহসী বাঙালি প্রথম অবস্থায় হতভম্ব হলেও ক্ষনিকের মধ্যেই তা সামলে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বঙ্গবন্ধুর কথামতো ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলে। অদম্য বাঙালি জাতি ওই গণহত্যার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে। পাক বর্বর বাহিনীকে রুখে দিয়ে মুক্তির আন্দোলন শুরু করে। দেশ জুড়ে শুরু হয় বাংলার দামাল ছেলেদের প্রতিরোধ। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে স্বাধীন দেশের জন্য সংগ্রাম করতে থাকে।

অস্ত্র হাতে বাংলার দামাল ছেলেরা
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন দেশ ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
পরে ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২৬শে মার্চকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। আর ২৬ শে মার্চকে জাতীয় বা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় ১৯৮০ সালে।
যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকের আমাদের এই বাংলাদেশ, তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম। বাংলাদেশ আমার অহংকার, সকলের অহংকার। আমরা কখনোই জাতির বীর সন্তানদের ভুলবো না, ভুলতে পারিনা। স্বাধীনতা বিভক্তির নয়, স্বাধীনতা ঐক্যের।
স্বাধীনতার চেতনাকে বুকে ধারণ করে সকল ভেদাভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই হোক স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকীর মূল প্রতিপাদ্য।