ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সাংবাদিকসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্যই এজন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর করছে সরকার। এ আইন সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। তবে সাংবাদিক সমাজ এ আইন মানে না, মানবেও না। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আগামী ১লা নভেম্বর আইসিটি মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
”গণবিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন” বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে (একাংশ) আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। নিউ নেশন পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও সাংবাদিক ইব্রাহীম মন্ডলকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন সাংবাদিক নেতারা। বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভূলণ্ঠিত করার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো ঘৃণিত আইন কার্যকর করা হয়েছে।
এ আইনে কেউ স্বাধীনভাবে লিখতে ও বলতে পারবে না। কেউ যেনো সরকারের সমালোচনা করতে না পারে এজন্যই এ আইন কার্যকর করা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে দেশের আপামর মানুষকে জুলুম-নির্যাতন করা হচ্ছে। সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য এ আইন ব্যবহার করছে। যেনো একটি পাতানো নির্বাচন করে আবার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে পারে। কিন্তু সাংবাদিক সমাজ তা কখনোই বাস্তবায়ন হতে দেবে না। এবার ঐক্যবদ্ধভাবে সাংবাদিক সমাজ কঠোর জবাব দিবে। তিনি বলেন, এ কালো আইনের শিকার হয়েছে নিউ নেশন সম্পাদক ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও সাংবাদিক ইব্রাহীম মন্ডল। যা খুবই দুঃখজনক। এসময় তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দেলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান। বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসছি, সরকার কোনো কর্ণপাত করছে না। এ সরকার গণবিরোধী ও মিডিয়া বিরোধী। এ আইন সাংবাদিকসহ দেশের সকলকে নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে দিয়েছে। কেউ স্বাধীনভাবে লিখতে ও বলতে পারছে না। শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এবং একদলীয় শাসন কায়েম করার জন্য এ আইন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ আইন বাতিলের দাবিতে আমাদের লড়াই চলছে এবং চলবে। যতদিন এ আইন বাতিল না হবে ততদিন আমরা রাজপথে আছি এবং থাকবো। আগামী ১লা নভেম্বর আইসিটি মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করবে বিএফইউজে ও ডিইউজে।
বিএফইউজে মহাসচিব এম আবদুল্লাহ বলেন, দেশে এখন মামলা সন্ত্রাস চলছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শিকার হয়েছে নিউ নেশন সম্পাদক ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও সাংবাদিক ইব্রাহীম মন্ডল। সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় ইব্রাহীম মন্ডলকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। এ আইন যতদিন বাতিল না হবে ততদিন আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই এ কালো আইন বাতিল করা হবে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে। তখনই দেশে মিডিয়ার স্বাধীনতা ফিরে আসবে এবং বন্ধ গণমাধ্যম খুলবে। ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সরকারের দুর্নীতি ও অপশাসন যেনো প্রকাশ না পায় তার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে। দেশে ভয়ঙ্কর দুঃশাসন চলছে। দেশের আপামর জনগণের সঙ্গে আমরা সাংবাদিকরাও এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি চাই। বর্তমান দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায়ও যেনো কেউ কিছু লিখতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এ আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে আছি এবং থাকবো।
বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল আমিন রোকন, সহ-সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, সহকারী মহাসচিব আহমেদ মতিউর রহমান, ডিইউজের সহ সভাপতি শাহীন হাসনাত, বিএফইউজের প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, বাংলাদেশ ফটো জার্ণালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি একেএম মহসীন, বাসসের ইউনিট চীফ আবুল কালাম মানিক, ডিআরইউর সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কাফি কামাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।