ডলফিনের শিসের মধ্যে কী তথ্য লুকিয়ে আছে

কোথাও গেলে আমরা আমাদের পরিচয় দিই। নামধাম-ঠিকানাসহ বিভিন্ন তথ্য দিই নতুন মানুষের সামনে। সামুদ্রিক ডলফিনরা তাদের পরিচয় প্রকাশের জন্য বিশেষ ধরনের শিস ব্যবহার করে বলে জানা গেছে। অনন্য ফ্রিকোয়েন্সির প্যাটার্ন ব্যবহার করে নিজেদের পরিচয় দেয় ডলফিনরা।

মানুষের মতো অনেক প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে। নিজেদের মধ্যে তখন কার্যকর যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয়। জটিল সামাজিক প্রাণীদের প্রায়ই জটিল যোগাযোগব্যবস্থা দেখা যায়। শিম্পাঞ্জিরা যেমন একে অপরের দিকে ইঙ্গিত করে কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে শব্দ করে। আবার স্পর্শ বা কম ফ্রিকোয়েন্সির ডাকের মাধ্যমে হাতিরা নিজেদের পরিবারের মধ্যে কথা বলে।

বটলনোজ ডলফিনেরা বেশ জটিল সামাজিক পরিবেশে বাস করে। তাদের সামুদ্রিক সমাজে প্রতিটি প্রাণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকে। একেকটি ডলফিনের জীবনে কয়েকজন পরিচিত ডলফিন থাকে আবার ডলফিন সমাজে অনেক অলস ডলফিনও থাকে। নিজেদের সুস্থ সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ডলফিনের আন্তমিথস্ক্রিয়ার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের শিস দিয়ে সম্পর্ক তৈরি করে ডলফিনরা।

বিজ্ঞানীরা বেশ অনেক আগে থেকেই ডলফিনদের শিস ব্যবহারের কথা জানেন। ডলফিনরা অন্যদের কাছে নিজেদের পরিচয় দেওয়ার জন্য সিগনেচার হুইসেল ব্যবহার করে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, এসব শিসে কেবল পরিচয়ের চেয়েও বেশি তথ্য থাকতে পারে। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী একাতেরিনা ওভস্যানিকোভা বলেন, ডলফিনরা যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে। শিসকে দুটি বিস্তৃত শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। সিগনেচার হুইসেলের মাধ্যমে ডলফিনরা নিজেদের পরিচয় দেয়। এর বাইরে আরও বিভিন্ন ধরনের শিসের শব্দ ব্যবহার করে ডলফিন।

ডলফিনরা তাদের পরিচয় প্রকাশের তাদের সিগনেচার হুইসেল নিয়মিত ব্যবহার করে। এর বাইরে আরও শিস ব্যবহার করে। ছোট থাকার সময়েই ডলফিনরা এই সব সংকেত ব্যবহার শিখে যায়। সারা জীবন ধরে শিস দিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা ধরে রাখে।

অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় একটি ডলফিনের হুইসেলের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত তার সিগনেচার হুইসেল দিয়ে গঠিত হয়। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বিজ্ঞানীরা পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন উপকূলে অবস্থিত মোরেটন দ্বীপের কাছে টাঙ্গালুমা আইল্যান্ড রিসোর্টে গবেষণা করেন। সেখানে ইন্দো-প্যাসিফিক বোতলনোজ ডলফিনের একটি দলের মধ্যে ব্যবহৃত শব্দ রেকর্ডিং করা হয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘আমরা একই ডলফিনের শিস অনেকভাবে সংগ্রহ করেছি। আমরা ১৫ বছর আগে একই দলের কাছ থেকে সংগৃহীত পুরোনো রেকর্ডের তথ্যও ব্যবহার করেছি।’

নিজেদের পরিচিতির শিস ছাড়াও অন্য সব শিস সংকেতের মাধ্যমে ডলফিনদের মধ্যে তথ্য প্রেরণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। আবেগগত বা প্রাসঙ্গিক কোনো সংকেত প্রদানে এসব শিস ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে। এক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, পুরুষ ডলফিনদের শিস স্ত্রীদের তুলনায় বেশি পরিবর্তনশীল। সামাজিক ভূমিকার পার্থক্য ও মিথস্ক্রিয়ার প্রকৃতির কারণে ভিন্ন হতে পারে।

ডলফিনের যোগাযোগব্যবস্থা প্রাণীরা কীভাবে যোগাযোগ করে, সেই সম্পর্কে নতুন সব ধারণা দিচ্ছে বিজ্ঞানীদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *