জনপ্রিয়তা কমেছে বাম রাজনীতির, ডাকসুতে সমাধান খুঁজছেন নেতারা

অর্ধযুগ পর ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ১০টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। নব্বই দশক পর্যন্ত ঢাবিতে ছাত্রসংসদের বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর সুস্পষ্ট আধিপত্য ছিল। তবে সময়ের পরিবর্তনে তারা আগের জনপ্রিয়তা হারিয়ে বর্তমানে বিভাজন ও সীমিতসংখ্যক কর্মী নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিভেদের কারণে ডাকসুর জন্য পৃথক দুটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার আগে ও পরবর্তী সময়ে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে শুধু প্রায় সবগুলোতেই বামপন্থীরা জয়ী হয়। মতিয়া চৌধুরী, মাহফুজা খানম, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ অনেকে তাদের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হন এবং আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। তবে ১৯৯০-এর পর থেকে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা হারিয়ে বর্তমানে নিজেদের মধ্যে বিভাজনের চর্চায় লিপ্ত তারা। এবারের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কর্মী সংকটের কারণে কোনো হলে প্যানেলও ঘোষণা করতে পারেনি তারা। ঐক্যবদ্ধভাবে প্যানেল ঘোষণার জন্য আলোচনা করা হলেও সমন্বয়হীনতায় সেখানেও ব্যর্থতা সামনে এসেছে।

ডাকসু নির্বাচনে পৃথক প্যানেল

১২ জন নারী, তিনজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেল। যেখানে আছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র যুব আন্দোলন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী। প্যানেলটিতে সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী করা হয়েছে ২০১৯ সালে শামসুন নাহার হল সংসদে নির্বাচিত সহ-সভাপতি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমিকে। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) করা হয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি মেঘমল্লার বসুকে। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

তিনটি বামপন্থী সংগঠন মিলে ‘অপরাজেয় ৭১ অদম্য ২৪’ ১৫ সদস্যের আংশিক প্যানেল দিয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএলের নেতাকর্মীরা রয়েছে এই প্যানেলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্যানেলের এক প্রার্থী জানান, ‘বামপন্থী সংগঠনগুলোর বিভক্তি ও কর্মী সংকটের কারণে মূলত ২৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও চেষ্টা চলছে প্যানেল পূর্ণাঙ্গ করার।’

বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর ভাঙন ও অনিয়মিত কমিটি

রাজনীতিতে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর এমন অবস্থার অন্যতম কারণ নিজেদের মধ্যে বিভাজন। একটি সংগঠন ভেঙে দুটি, দুটি থেকে তিনটি ভাগে ভাগ হয়েছে বামপন্থি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। বামপন্থীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠন ছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। কিন্তু বিভক্তির কারণে তারা আজ সাংগঠনিক দিক দিয়েও দুর্বল অবস্থানে। ২০২১ সালে ছাত্র ইউনিয়ন ভেঙে দুই ভাগ হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তাদের দুটি আলাদা কমিটি হয়েছে। একটি ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) অন্যটি ছাত্র ইউনিয়ন (বিদ্রোহী)। বিভাজনের ফলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিতিও কম। দুই গ্রুপের মধ্যে ঢাবিতে কিছুটা শক্তিশালী অবস্থানে আছে বিদ্রোহী ছাত্র ইউনিয়ন। প্রতিবছর কাউন্সিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠনের কথা থাকলেও সর্বশেষ কমিটি হয়েছে ২০২৩ সালের নভেম্বর। সেই কমিটি দিয়েই চলছে তাদের কার্যক্রম।

বামপন্থী সংগঠনগুলোর মধ্যে শক্তিশালী আরেকটি সংগঠন ছিল বাসদ ছাত্রলীগ। ৮০ ও ৮২ সালের ডাকসু নির্বাচন সেই প্যানেল থেকে ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ৮৪ সালে বাসদ ছাত্রলীগ থেকে সৃষ্টি হয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। সেই সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আজ ভেঙে এখন তিন টুকরো। ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ), ছাত্রফ্রন্ট (মাক্সবাদী), গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল নামে চলছে তাদের কার্যক্রম। সর্বশেষ ২০২১ সালে ছাত্রফ্রন্ট ভেঙে এই গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল গঠিত হয়। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুটা সক্রিয় অবস্থানে আছে ছাত্রফ্রন্ট (মাক্সবাদী)। দুবছর পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি গঠন করে নিজেদের কার্যক্রম চালাচ্ছে সংগঠনটি। কিন্তু অন্য দুটি সংগঠনের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কোন কমিটিই নেই। ২০২২ সালের পর কমিটি হয়নি ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ)। পরে কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়, সেই কমিটির অধীনেই চলছে ঢাবি শাখার কার্যক্রম।

অন্যদিকে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী দুই ভাগের মধ্যে সাংগঠনিক দিক দিয়ে কিছুটা শক্তিশালী অবস্থানে আছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে সরব তারা, তবে কর্মী সংখ্যা হাতে গোণা কয়েকজন। তবে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন কোন কার্যক্রম চোখে পড়ে না।

জোটে ভাঙন

২০২২ সালের ডিসেম্বরে আটটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন নিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট নামে জোট করা হয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (মুক্তি কাউন্সিল) , গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন এসব জোটের অংশ।

তবে এই জোটেও চলছে ভাঙন। ইতিমধ্যে জোট থেকে দুটি ছাত্র সংগঠন বেরিয়ে গিয়েছে। গত জুলাইয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট থেকে বেরিয়ে যায় ছাত্র ফেডারেশন। আর বাসদ নেতাদের যৌন হয়রানি নিয়ে বিবৃতি দিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট প্রতিবাদ জানালে, জোট থেকে বেরিয়ে যায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ)। আর জোটে থাকা বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কমিটি নেই। কোনো নিজস্ব কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় না তাদের। পাশাপাশি বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কার্যক্রমও তেমন চোখে পড়ে না।

ঢাবি শিক্ষার্থীরা বলছেন, বামপন্থি ছাত্রসংগঠনের জনপ্রিয়তা মুষ্টিবদ্ধ এক শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে শিক্ষার্থীদের পাশে না দাঁড়িয়ে বরং শাসক দলের বি-টিম হিসেবে কাজ করেছে বলেও অভিযোগ। বর্তমানে তাদের কার্যক্রম দেয়াল লিখন ও ছোট কর্মসূচিতে সীমিত, মিছিল-মিটিংয়েও কর্মীর চেয়ে সাংবাদিক বেশি দেখা যায়। ফলে ডাকসুতেও এখন বামরাজনীতি নিয়ে নেই আলোচনা।

ঢাবি শিক্ষার্থী সূচি শিকদার বলেন, বামপন্থীদের জনপ্রিয়তা মূলত সীমিত এক শ্রেণির মধ্যেই। যারা বই পড়তে ভালোবাসে, সংস্কৃতিচর্চা করে ও প্রতিবাদী মনোভাব পোষণ করে। যদিও তারা দেশ, জনগণ ও শ্রেণি ঐক্যের কথা বলে, কিন্তু নিজেদের মূল নীতিতেই ঐক্য নেই। যখন যেই রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের প্রতি অনুগত থাকে তাদের দলের লোকেরাই। তবে এর থেকে বড় সমস্যা তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় হতে পারেনি। তারা নিম্নবিত্তদের সংগ্রামকে পু্ঁজি করে নানা সময় কথা বলে, অধিকার আদায়ে মাঠে নামে কিন্তু ওই শ্রেণির কাছে তারা কেন ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পারেনি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান সম্রাট বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগে পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বামদের সমর্থন বেশি ছিল। তখন তারা শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলতো। পরবর্তীতে পুঁজিবাদ ও গণতন্ত্রের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়। ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে শিক্ষার্থীদের পাশে না দাঁড়িয়ে অনেক সময় আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসেবে কাজ করার অভিযোগও উঠেছে। আদর্শগত অনৈক্য ও স্বার্থের কারণে বর্তমানে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ সংগঠনগুলো বিভক্ত। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এক হলেও পরে আবার ভাঙন দেখা দেয়। বর্তমান ডাকসুতেও বিভাজন স্পষ্ট।

তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে সরকারের বিভিন্ন ন্যারেটিভ বিশেষত জুডিশিয়াল কিলিং এর মতো বিষয়গুলোতে তারা বৈধতা দিয়েছে। নির্বাচনে তাদের কিছু অংশ জোটসঙ্গী হয়েছে ফলে শিক্ষার্থী ও জনমনে তাদের সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বর্তমানে তাদের মিছিল মিটিংয়ে কর্মীর থেকে সাংবাদিক বেশি দেখা যায়, একই সাথে তাদের কার্যক্রম দেয়াল লিখন আর চিকমারার মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। ফলে আসন্ন ডাকসু ইলেকশনে তাদের শোচনীয় পরাজয় অনেকটায় অনুমেয়। জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতি একপাশে ফেলে আবার জনসম্পৃক্ততার রাজনীতি করতে পারলে নিজেদের আদর্শিক দ্বন্দ্ব, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার এবং জাতীয় রাজনীতিতে জনগণের আকাঙ্ক্ষার রাজনীতি করতে পারলেই শুধু এই সংকট কাটানো সম্ভব। তবে আপাতত এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সুজন বলেন, নিজেদের মধ্যে বিভক্তির কারণে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো একতা ধরে রাখতে পারেনি। অনেক নেতাকর্মী পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির মতো বড় দলে যোগ দেয়ায় সংগঠনগুলোর স্বাধীন অবস্থানও প্রভাবিত হয়েছে। তারা ছাত্রদের অধিকার ও দাবিগুলো তুলে ধরে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে কোনো প্রভাব রাখতে পারে না। দাবিগুলোও রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সরকারের সঙ্গে সমন্বয়হীন থাকায় তাদের জনপ্রিয়তা কমে গেছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা পিছিয়ে থাকায় বর্তমান প্রজন্মের কাছে কার্যকরভাবে পৌঁছাতে পারছে না।

জনপ্রিয়তা কমার কারণ নিয়ে যা বলছেন নেতারা

বিসিএল ছাত্রলীগ ঢাবি শাখার সভাপতি ও অপরাজেয় ৭১ ও অদম্য ২৪ প্যানেলের মনোনীত ভিপি প্রার্থী নাইম হাসান হৃদয় বলেন, আমরা কোয়ান্টিটি নয় কোয়ালিটিতে গুরুত্ব দিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। বিগত সরকারের সময়ে নানা সময়ে সীমাবদ্ধতার জন্য সংগঠন গুছাতে পারিনি। ফলে আমাদের কর্মী সংকটও রয়েছে। এটা শুধু আমাদের না, অন্যান্য বাম সংগঠনগুলোরও আছে। তবে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে যোগাযোগ করছি, তারাও যোগাযোগ করছে। যদি আমরা সমন্বয় না করতে পারি তাহলে ১৫ সদস্যের প্যানেলই থাকবে।

ঐক্যের প্রচেষ্টা নিয়ে নাইম বলেন, ‘টপ তিনটা পদের একটাতে লড়াই করে জয় নিয়ে আসার ক্যাপাবিলিটি আছে। কিন্তু ঐক্যের স্বার্থে আমরা তিনটা পদ ছেড়ে দিয়েছি। আমরা চেয়েছি ক্যাম্পাসে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর উত্থান ঠেকাতে। ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে ছিল না, ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে আসতে দেয়া হতো না। ফলে আমরা প্রগতিশীল সংগঠনগুলোই আওয়ামীলীগ সরকারের ফ্যাসিস্ট আচরণ গণরুম, গেস্টরুমের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কথা বলেছি। সেই জায়গা থেকে আমরা ঐক্য চেয়েছি।’

তিনি বলেন, প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের সংগঠনগুলো থেকে ত্যাগ শিকার করতে চায়নি। আমাদের তিনটা সংগঠনের কারও কারও ত্যাগের মানসিকতা কম ছিল। ওই প্যানেলের ত্যাগের মানসিকতা না থাকায় ঐক্য সম্ভব হয়নি। তবে মাঠে আমাদের অবস্থান জানান দেয়ার জন্য প্যানেল দেয়া প্রয়োজন। কারও ভোট নষ্ট করার জন্য প্যানেল ঘোষণা করা হয়নি, এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ভাষা।

পূর্বের জনপ্রিয়তা ফেরাতে শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতি চর্চা করছি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর শিক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছি। ছাত্রদল ডাকসুতে নির্বাচিত হলে তাদের নির্দেশনা লন্ডন থেকে আসবে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। আমরা ঠিক করে দেই কী করতে হবে। শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতির মধ্য দিয়ে আমরা পূর্বের জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনব।

বাম সংগঠনগুলোর জনপ্রিয়তা কমার কারণ হিসেবে ডাকসুর জিএস পদপ্রার্থী মেঘমল্লার বসু বলেন, ১৯৯০ পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালে মাত্র একবার ডাকসু হয়েছে। অনিয়মিত ডাকসুর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাম সংগঠনগুলো। তবে সোভিয়েত পতনের পর প্রায় দুই দশক বামপন্থীরা দিশাহীনতায় থাকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।  জনপ্রিয়তা খর্ব হওয়ার কারণ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে, যা এক ধরনের নিও-লিবারালাইজেশনের প্রভাব। ভারতের ছাত্রসংসদগুলোতে যেমন শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন বামপন্থীদের জনপ্রিয়তার ভিত্তি, তেমনি এখানে নিয়মিত নির্বাচন হলে বামপন্থিরা শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের অবস্থান তুলে ধরতে পারতো। 

কয়েক বছরের মধ্যেই বাম ছাত্র রাজনীতি আগের অবস্থায় ফিরবে দাবি করে মেঘমল্লার বলেন, প্রতিরোধ পর্ষদ বামপন্থী, গণতান্ত্রিক, উদারবাদীর সমন্বয়ে একটি প্যানেল গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। ফলাফল যাই হোক, নিয়মিত নির্বাচন হলে আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী কয়েক বছরের মধ্যেই বামপন্থি ছাত্র রাজনীতির যে প্রবল অবস্থান ছিল সেটা ফিরে পাবে।

বামপন্থীদের মধ্যে দুই প্যানেল ভাগ হওয়া প্রসঙ্গে মেঘমল্লার বলেন, আমাদের ধারণা, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলো টাকা খরচ করে একটি ভুয়া প্যানেল দাঁড় করিয়েছে। যাতে প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিকদের ভোট কোথায় যাবে তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। মিডিয়া এটিকে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল হিসেবে প্রচার করলেও বাস্তবে এটি কোনো পূর্ণাঙ্গ প্যানেল নয়। আসলে এটি আওয়ামী লীগের বি-টিমের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্যানেল, যার ক্যাম্পাসে কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। এটিকে বামপন্থি প্যানেল বলা বামপন্থিদের প্রতি চরম অসম্মান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *