ইলন মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ভারতে গাড়ি উৎপাদনে আগ্রহী নয়। দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে উৎসাহ দিতে সোমবার (২ জুন) ভারতের সরকার নতুন একটি প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে। এই প্রকল্পের বিস্তারিত প্রকাশের দিনে দেশটির কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী টেসলার অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
এর আগে গেল মার্চে ভারত বৈশ্বিক বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নির্মাতাদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করে করে ভারত। তবে ওই প্রণোদনা ইলন মাস্ককে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে পারেনি। আর সেটা প্রকাশ্যে প্রথমবারের মতো স্বীকার করলেন দেশটির কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী।
গাড়ি উৎপাদনে আগ্রহী না হলেও টেসলা ভারতে দু’টি শোরুম চালু এবং তাদের খুচরা বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী। তিনি বলেন, ‘‘মার্সিডিজ বেঞ্জ, স্কোডা-ভক্সওয়াগেন, হুন্দাই এবং কিয়া ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরা টেসলার কাছ থেকে এই ধরনের কিছু প্রত্যাশা করছি না।’’
দেশটির অপর একজন সরকারি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) বলেছেন, টেসলার একজন প্রতিনিধি প্রথম দফায় অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় টেসলার আর কোনও প্রতিনিধি আলোচনায় অংশ নেননি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, যদি টেসলা ভারতে কারখানা তৈরি করে; তবে সেটা ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অবিচার’’ হবে। ট্রাম্পের এমন সতর্কতার পর ভারতে টেসলার কারখানা স্থাপন কিংবা গাড়ি তৈরি না করার বিষয়টি নিশ্চিত করল দিল্লি।
গত কয়েক বছরে ভারতের বাজারে প্রবেশ করা নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা করেছিল টেসলা। এর আগে, ২০২২ সালে ভারতে টেসলার বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর একটি পরিকল্পনা নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে যায়। ওই সময় ভারত সরকার টেসলাকে স্থানীয়ভাবে গাড়ি তৈরির পরামর্শ দিলেও টেসলা রপ্তানির মাধ্যমে ভারতের বাজারের চাহিদা যাচাই করতে চেয়েছিল।
২০২৩ সালে মাস্ক বলেছিলেন, তিনি ভারতের বাজারে বিনিয়োগের ‘‘সঠিক সময় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।’’ চলতি বছর ওয়াশিংটন ডিসিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন ইলন মাস্ক। ওই বৈঠকে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার এখনও টেসলার জন্য উপযুক্ত নয়। ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি এখনও মোট যাত্রীবাহী গাড়ির ৩ শতাংশেরও কম। এছাড়া স্থানীয়ভাবে তৈরি অন্যান্য গাড়ির দাম টেসলার বেসিক মডেলের দামের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। পাশাপাশি চার্জিং অবকাঠামো ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এতে বেশি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বর্তমানে ভারতের ইভি বাজারে গাড়ি ব্রিক্রির শীর্ষে রয়েছে টাটা মোটরস। ভারতের বাজারে বিক্রি হওয়া বৈদ্যুতিক গাড়ির ৬০ শতাংশেরও বেশি দেশটির এই কোম্পানির। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এমজি মোটরস; যা ভারতের জেএসডব্লিউ ও একটি চীনা প্রতিষ্ঠানের যৌথ মালিকানাধীন। ভারতের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে তাদের শেয়ারের পরিমাণ ২২ শতাংশ।